মুম্বাইয়ের বিপক্ষে গত ম্যাচে ম্যাড়মেড়ে মোস্তাফিজ, সেই সাথে দলও হারে বাজেভাবে। ৩.৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজ সাকুল্যে উইকেট নিয়েছিলেন একটি। নেট রানরেটে সেদিন দলের সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন তিনি। আজ হায়দরাবাদের বিপক্ষে বেয়ারস্ট্রো প্রথম বলে চার হাকালে মুম্বাইয়ের ম্যাচটার কথা ফিজ সমর্থকদের মনে পড়তে বাধ্য। সেদিন প্রত্যেকটা ওভারের শুরুর বলে চার নয়তো ছক্কা খেয়েছেন মোস্তাফিজ। তবে কি হায়দরাবাদ ম্যাচেও একি দশা! এমন যখন চিন্তা ধুকপুক করছে ফিজ সমর্থকদের মনে তখন স্বস্থির শেষ হয় মোস্তাফিজের ওভার। সাকুল্যে প্রথম ওভারে রান দেন মাত্র ৭।
এরপর ৭ম ওভারে মোস্তাফিজ যখন ফিরেন তখন মানিশ পান্ডে-জনি বেয়ারস্ট্রো বীরত্বে ম্যাচের লাগাম যেন হায়দরাবাদের কাছে। এবার এসে প্রথম বলেই ফিরালেন পান্ডেকে। ৫৭ রানে প্রথম উইকেটের পতন হলো মোস্তাফিজের হাত ধরেই। এই ওভারে সাকুল্যে দিলেন ৪ রান। ১৫তম ওভারে বিপদজনক হতে যাওয়া আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে ফেরান যখন তখন তার সংগ্রহ ৫ বলে ১৭ রান। সেই ওভারে আর কোন উইকেট না পেলেও রান দেন মাত্র ৩। ১৮তম ওভারে ফিরে ৭ রান দিয়ে রশিদ খানের উইকেট নিয়ে সমাপ্ত করেন চার ওভারের কোটা। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ—আইপিএলে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় সেরা বোলিং। মোস্তাফিজের আলো ছড়ানোর রাতে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দুই দলের লড়াইয়ে রাজস্থান পেয়েছে ৫৫ রানের বিশাল জয়, টুর্নামেন্টে রাজস্থানের তৃতীয় জয় এটি। রাজস্থানের ২২০ রানের জবাবে হায়দরাবাদ ২০ ওভারে ৮ উইকেটে করে ১৬৫ রান।
এ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে ছয় নম্বরে উঠে এসেছে রাজস্থান। ৭ ম্যাচে তৃতীয় জয়ে তাদের পয়েন্ট ৬। সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই রইল হায়দরাবাদ। আর মোস্তাফিজ? অল্পের জন্য আইপিএলে নিজের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা ছোঁয়া হলো না তাঁর। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদে থাকার সময়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ১৬ রানে ৩ উইকেট পেয়েছিলেন মোস্তাফিজ। আজ নিজের চতুর্থ ওভারের একেবারে শেষ বলে কোনো রান না দিলেই তো ব্যক্তিগত রেকর্ডটাই ধরতে পারতেন। কিন্তু সন্দীপ শর্মার ব্যাটের কানায় লেগে বল উইকেটকিপার ও প্রথম স্লিপের মধ্য দিয়ে চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। আইপিএলে এ নিয়ে তৃতীয়বার ইনিংসে ৩ উইকেট পেলেন মোস্তাফিজ।
এদিকে অধিনায়ক বদলে, দলে ধাক্কা দিয়েও কোনো লাভ হলো না মোস্তাফিজেরই সাবেক দল হায়দরাবাদের। বাজে পারফরম্যান্সের জন্য এতদিন ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে আজকের ম্যাচের আগে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফর্ম বাজে থাকায় একাদশ থেকেও বাদ দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারকে। সে জায়গায় দলের অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় কেইন উইলিয়ামসনকে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। জশ বাটলারের বিধ্বংসী এক ইনিংসের কাছে শুরুতেই পরাজয়ের শঙ্কা চেপে বসে। রাজস্থান ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২২০ রানের পাহাড়। বাটলার ৬৪ বলে ১২৪ রান করে সন্দীপ শর্মার শিকার হলেও ততক্ষণে কাজের কাজ করে ফেলেছেন। সেই সাথে অধিনায়ক সানজু স্যামসনের ৩৩ বলে ৪৮, রিয়ান পরাগের ৮ বলে ১৫, শেষ দিকে মিলারের ৩ বলে ৭ রানে বিশাল সংগ্রহ গড়ে।
এতে লক্ষ্যটাই এমন যে, ওভারপ্রতি ১১ করে নিতে হবে। দুই ওপেনার মনিশ পান্ডে ও জনি বেয়ারস্টো সে জায়গায় তেড়েফুঁড়ে শুরু করেছিলেন। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভারেই আসে ৫৭ রান। কিন্তু শুরুর জোর বেশিক্ষণ থাকেনি। থাকেনি মোস্তাফিজের কারণেই। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন পান্ডেকে। স্লোয়ার দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। মিডল-লেগ স্টাম্পে থাকা বল ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন পান্ডে, কিন্তু স্লোয়ার বুঝতে পারেননি। বোল্ড হয়ে গেলেন। এরপর কেউই এসে থিতু হতে পারেননি। পান্ডে ৩১ (২০বল), বেয়ারস্ট্রো ৩০ (২১ বল), অধিনায়ক উইলিয়ামসন ২০ (২১ বল) কয়েকটি ছোট ইনিংসে ১৬৫ রানে থামে হায়দরাবাদের ইনিংস। রাজস্থান পায় ৫৫ রানের স্বস্থির জয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন